বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ০৩:১৫ অপরাহ্ন
ক্রাইম সিন ডেস্ক: নিজস্ব জমি এবং ঘর না থাকায় পুলিশের চাকরি থেকে বাদ পড়া হিজলা উপজেলার ভূমিহীন সেই আছপিয়াকে জমি এবং ঘর বুঝিয়ে দিলেন বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পংকজ নাথ।
মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে মঙ্গলবার দুপুর ২টায় উপজেলার বড়জালিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম খুন্না-গোবিন্দপুর গ্রামে আনুষ্ঠিানিকভাবে আছপিয়ার মা ঝরনা বেগমের হাতে ঘরের চাবি এবং জমির দলিল তুলে দেন তিনি।
এসময় বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) গৌতম বাড়ৈ, উপজেলা চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন ঢালী, হিজলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বকুল চন্দ্র কবিরাজসহ উপজেলা প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। মেয়ের পুলিশের চাকরি ফিরে পাবার পরে সরকারিভাবে ঘর এবং জমি পেয়ে আনন্দিত আছপিয়ার পরিবার। তারা ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রীসহ প্রশাসন ও গণমাধ্যমের প্রতি।
জানা গেছে, বরিশালের হিজলা উপজেলার খুন্না-গোবিন্দপুর গ্রামের মৃত সফিকুল ইসলামের মেয়ে আছপিয়া আক্তার কাজল। গত ১৫ বছর ধরে অন্যের জমিতে আশ্রিত হিসেবে থাকতেন তারা। ২০২০ সালে এইচএসসি পাস করে আছপিয়া। পরিবারে মা, তিন বোন ও এক ভাই রয়েছে। ভাই পোশাক কারখানায় চাকরি করে। তার আয়েই চলে আছপিয়াদের সংসার।
আছপিয়া জানায়, বরিশাল জেলায় পুলিশ কনস্টেবলের শূন্য পদে নিয়োগের আবেদন করেন তিনি। গত বছরের ১৪, ১৫ ও ১৬ নভেম্বর জেলা পুলিশ লাইনে শারীরিক যোগ্যতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৭ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষা, ২২৪ নভেম্বর মৌখিক পরীক্ষাং অংশ নেন তিনি। সকাল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মেধা তালিকায় পঞ্চম হন আছপিয়া।
এরপর ২৬ নভেম্বর জেলা পুলিশ লাইনে চিকিৎসক প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে। এতেও উত্তীণ হন তিনি। সবশেষে ২৯ নভেম্বর মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ঢাকার রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ লাইন হাসপাতালে চূড়ান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়। সেখানেও উতরে যান আছপিয়া।
কিন্তু চূড়ান্ত নিয়োগের পূর্বে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আছপিয়া এবং তার পরিবারকে ‘ভূমিহীন’ উল্লেখ করে গত ৮ ডিসেম্বর জেলা পুলিশ সুপার বরাবর প্রতিবেদন জমা দেন হিজলা থানার উপ-পরিদর্শক মো. আব্বাস। এর পরপরই স্থায়ী ঠিকানা না থাকা এবং ভূমিহীন হওয়ায় আছপিয়ার চাকরি হবে না বলে জানিয়ে দেয়া হয়।
এ খবরে গত ৮ ডিসেম্বর বরিশাল নগরীর কাশিপুর এলাকায় রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ের সামনে দিনভর বসে থাকেন আছপিয়া। এর আগে তিনি ডিআইজি’র সঙ্গে দেখা করেন। বিষয়টি গণমাধ্যমের দৃষ্টিতে আসলে সংবাদ প্রকাশ হয়। যা প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসে। এর পরপরই ভূমিহীন আছপিয়ার পরিবারকে পছন্দের জায়গায় জমি এবং মুজিব বর্ষের ঘর দেয়ার নির্দেশনা জেলা প্রশাসনের কাছে।
পরবর্তীতে জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দারের নির্দেশে হিজলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বকুল চন্দ্র কবির আছপিয়ার পরিবারকে উপজেলার বরজালিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম খুন্না গৌবিন্দপুর গ্রামে তাদের পছন্দ করা সরকারি জমিতে সরকারি খরচে ঘর তুলে দেন উপজেলা প্রশাসন। যা মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে বুঝিয়ে দেয়া হয় আছপিয়ার মা ঝরনা বেগমের হাতে।
এর আগে পুলিশে চাকরিও পেয়ে যান আছপিয়া আক্তার কাজল। বর্তমানে তিনি পুলিশের ট্রেনিংয়ে আছেন। তাই ঘর এবং জমির দলিল হস্তান্তর অনুষ্ঠানে থাকতে পারেননি আছপিয়া।